December 22, 2024
গ্রামীণ টেলিকমসহ আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর পাল্টায় গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ।ফাইল ছবি
গ্রামীণ টেলিকমসহ আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর পাল্টায় গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ।ফাইল ছবি

গ্রামীণ ব্যাংকের বক্তব্যের জবাব দিল ইউনূস সেন্টার

গ্রামীণ ব্যাংকে থাকাকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং করেছেন বলে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ তুলেছে, সেটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর বলে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদের কথা জানায় ইউনূস সেন্টার।

গত শনিবার গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ সংবাদ সম্মেলন করে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। তিনি বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড—এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের ভাষ্য হচ্ছে, দেশের খ্যাতিমান নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের বার্ষিক নিরীক্ষা করেছে। তারা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ও সরকারের গঠিত কমিটি এমন কোনো আর্থিক অসংগতি খুঁজে পায়নি। তা ছাড়া ড. ইউনূসের কর্মকালে গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড পরিচালিত হয়েছে সমাজের শ্রদ্ধাভাজন ও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা।

গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই বলে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে ইউনূস সেন্টার বলেছে, ড. ইউনূস নিজেই বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ তাঁর সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে তাঁর কোনো শেয়ার বা মালিকানা নেই। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক ব্যতীত তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর ২৮ ধারা অনুসারে গঠিত। যার কোনো ধরনের মালিকানা থাকে না।

গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণে ড. ইউনূস আর চেয়ারম্যান নেই, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের জন্মলগ্ন থেকে ড. ইউনূস চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত আছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির শুরুতে তাদের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনে চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা গ্রামীণ ব্যাংকের হাতে ছিল। পরে প্রতিষ্ঠান দুটি পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানি আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। সেটি ২০১১ সালের ২৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গ্রামীণ টেলিকমের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ ও ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করে আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ধারাগুলো সংশোধন করা হয়। তাই গ্রামীণ ব্যাংক এখন এ দুটি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে পারে না।

গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২৪ কোটি টাকা অনুদান নিয়েছেন—এমন ভাষ্যের বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠার সময়ে নরওয়ে থেকে ১৯ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড থেকে ৩০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে গ্রামীণ কল্যাণের নামে ঋণ চুক্তি হয়। যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিটি গ্রামীণ কল্যাণে হস্তান্তর করা হয়েছে, তাই এ বাবদ গ্রামীণ ব্যাংকে কোনো অর্থ প্রদানের প্রযোজ্যতা নেই।

এ ছাড়া সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড গঠন ও এর দ্বারা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দাতা সংস্থা থেকে প্রদত্ত অর্থের ২ শতাংশ গ্রামীণ কল্যাণকে দেওয়ার ক্ষেত্রে হিসাবসংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তিযুক্ত করার জন্য ৩৪৭ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণের নিজস্ব বুকস অব অ্যাকাউন্টসে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে বাস্তবে কোনো কোনো রকম আর্থিক লেনদেন হয়নি, যা গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাব বইয়ে প্রতিফলিত আছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক তথ্য ধ্বংস করেছেন। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টার বলছে, কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া যায়নি বলে কখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ও সরকার গঠিত কমিটি এমন কোনো পর্যবেক্ষণ দেয়নি। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চলে যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিও এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আনেনি।

এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে টেলিকম ভবন বা অন্য কোনো স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান করা হয়নি বলেও ইউনূস সেন্টারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Check Also

শুক্রবার ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শন করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।ছবি: সংগৃহীত

মেট্রোরেলের সুবিধা পুরান ঢাকাবাসীও পাবেন: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

মেট্রোরেলের সুবিধা পুরান ঢাকাবাসীও পাবেন বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সদরঘাটের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Sahifa Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.