হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হলো একটি ছদ্ম বৈজ্ঞানিক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি ১৭৯৬ সালে জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েলস হ্যানিম্যান আবিষ্কার করেন। হোমিওপ্যাথ নামে পরিচিত এর চিকিৎসকেরা বিশ্বাস করেন যে পদার্থ সুস্থ মানুষের মধ্যে একটি রোগের উপসর্গ সৃষ্টি করে সেই একই পদার্থ অসুস্থ মানুষের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ নিরাময় করতে পারে; এই ধারণাকে বলা হয় সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার বা ‘সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য করে’।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধকে রেমিডি বলা হয় এবং হোমিওপ্যাথিক ডায়োলেশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, নির্বাচিত পদার্থ বারবার মিশ্রিত করা হয় যতক্ষণ না চূড়ান্ত পণ্যটি রাসায়নিকভাবে দ্রবণীয় থেকে আলাদা হয়। প্রায়শই মূল পদার্থের একটি অণুও পণ্যটিতে থাকার আশা করা যায় না। প্রতিটি ডায়োলেশনে হোমিওপ্যাথ ওষুধটিকে আঘাত করতে পারে অথবা ঝাঁকি দিতে পারে, এই দাবি করে যে পাতলা পদার্থটি অপসারণের পরে মূল পদার্থটি মনে রাখে।
চিকিৎসকেরা দাবি করেন যে এই ধরনের প্রস্তুতকৃত ওষুধ, রোগীকে খাওয়ার পরে, রোগের চিকিৎসা বা নিরাময় করতে পারে। বর্তমান বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে, এমনকি ব্রিটিশ রাজপরিবারও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেয় এমনটি বলা হয়ে থাকে।
অনেকে মনে করেন হোমিওপ্যাথি কাজ করে না, তারমানে ব্রিটিশ রাজপরিবারসহ সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ তাহলে কেন এর ওপর আস্থা রাখছে? বাংলাদেশ সরকার হোমিওপ্যাথির ওপর আস্থা রেখে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা চিকিৎসা আইন ২০২৩ গঠন করে। এর পরেও কেন এ চিকিৎসা পিছিয়ে যাচ্ছে?
হোমিও চিকিৎসার ওপর কিছু জরিপ করে জানা যায়, এর শিক্ষায় নেই কোনো বয়সের শীতলতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্ষেত্রে যে কোনো গ্রুপ থেকে অংশগ্রহণ করতে পারবে। অধিকাংশ কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা নিম্নমানের ফলে সঠিক শিক্ষা শিক্ষার্থী অর্জন করতে পারছে না। সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে না পারার কারণে হোমিওপ্যাথিতে উন্নতি হচ্ছে না।
শিক্ষক বাণিজ্য তো আছে, হোমিওপ্যাথিক কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রও কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। পাশাপাশি যারা শিক্ষা অর্জন করতে ইচ্ছুক তারা সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না, ফলে অনলাইনভিত্তিক ক্লাসগুলো জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন ২০২৩ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডকে প্রতিস্থাপিত করে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন শিক্ষার বয়সের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম করা হোক। বিভিন্ন গ্রুপ থেকে শিক্ষার্থী নেওয়া বন্ধ করা, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করা, অনুমোদনহীন কলেজগুলো বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
শাকিল
হোমিও চিকিৎসক, ডিএইচএমএস (ঢাকা)
সূত্রঃ প্রথম আলো