দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ–২০ লিগের কোয়ালিফায়ার খেলেই ঢাকার বিমান ধরেছেন ইমরান তাহির। ৮ ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচের এক দিন পরেই (১০ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকার এই লেগ স্পিনারকে দেখা গেল রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচেই ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। তাহিরের কী ভাগ্য, টম ব্রুসের সেই উইকেটটাও পেয়েছেন নিজের প্রথম বলেই। এর আগে ২০১৯ সালের বিপিএলে সিলেট সিক্সার্স দলে ছিলেন, কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। বিপিএলে তাই এবারই প্রথম খেলছেন তাহির।
তবে এবারও যে খুব বেশি ম্যাচ খেলবেন, তা নয়। আগামীকাল বিপিএলের চট্টগ্রামের পর্বে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে রংপুরের প্রথম ম্যাচ। ওই ম্যাচ খেলেই বিপিএল ছাড়বেন ৪৪ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই চাইবেন আরও একবার দলের জয়ে বড় অবদান রেখে যেতে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চান তাহির। তা হলো বিপিএলে নিজের দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানকে তাঁর নতুন ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন জানানো।
তাহিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একটা ‘কমন’ প্রশ্ন থাকেই। বয়স তো কম হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়েছেন ৫ বছর হয়ে গেল। এখনো কীভাবে পেশাদার ক্রিকেট খেলার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন? ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা তাহিরের দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক ৩০ বছর বয়সে। দেরিতে যেহেতু ক্যারিয়ারের শুরু, দ্রুত কেন খেলা ছাড়বেন!
৪৪-এ এসেও খেলা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাহিরের অনুপ্রেরণা এটাই, ‘অনেক সময় আপনি ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ পাবেন না। সেই সুযোগ যদি দেরিতে আসে, তাহলে তা সহজে হাতছাড়াও করতে চাইবেন না, আমি এটাই বিশ্বাস করি। এখন যেকোনো দল আমাকে যে দায়িত্ব দেয়, আমি সেটাই করি। যতক্ষণ পর্যন্ত দলগুলো আমাকে সুযোগ দেওয়া বন্ধ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি খেলা ছাড়ার কথা ভাবছি না। আমি বয়স দেখি না, এটাই আমার ব্যক্তিত্ব।’
সময়টাও বেশ উপভোগ করছেন। বিশেষ করে রংপুরের পেশাদারত্ব মুগ্ধ করেছে তাহিরকে। বিশ্বের এমন কোনো লিগ বাকি নেই, যেখানে তাহির খেলেননি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই রংপুরের দল পরিচালনার ধরন নিয়ে বললেন, ‘মাত্র একটা ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু খুবই ভালো অভিজ্ঞতা বলতেই হয়। খুবই পেশাদার দল। লোকজন খুব ভালো। আমি এর মধ্যেই সেটা অনুভব করতে পারছি। আমি এটা ধরতে পারি; কারণ, আমি সারা বিশ্বে ক্রিকেট খেলি। কোথাও খেলতে গেলে পরিবেশটা যদি খারাপ লাগে, আমি আগেই বুঝতে পারি। এটা পুরোটাই অভিজ্ঞতা। আমি এখানে তিন থেকে চার দিন ধরে আছি। এখানকার লোকজন খুবই পেশাদার। আমি রংপুরকে ধন্যবাদ দিতে চাই সুযোগটা দেওয়ার জন্য।’
একটা সময় বিপিএলকে মনে করা হতো বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের অন্যতম। সময় বদলেছে। প্রায় প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশই এখন টি-টোয়েন্টি লিগের আয়োজক। সেই প্রতিযোগিতায় যে বিপিএল পিছিয়ে পড়েছে, তার আরও একটি প্রমাণ তাহিরের পরের কথাটি, ‘আমি মনে করি, আইপিএলের পরে এসএ লিগ এর মধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা লিগে পরিণত হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। অনেকটা বিপিএলের মতোই, মাঠভর্তি দর্শক, দর্শকের উন্মাদনা আছে। যেকোন টুর্নামেন্ট সফল হওয়ার জন্য স্থানীয়দের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে খেলার মান দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এখানেও বেশ উঁচুতে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়ে তাহিরের একটা অভিযোগ আছে, ‘প্রায় সব লিগেই এখন মাঠের সীমানা বেশ ছোট। যদিও বোলার হিসেবে আমার এ নিয়ে অভিযোগ আছে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব বেশি স্পিন–সহায়ক উইকেট পাই না। সব সময়ই ফ্ল্যাট উইকেট, ছোট বাউন্ডারি। ফলে বোলার হিসেবে আপনাকে অনেক বেশি দক্ষ হতে হয়। মানিয়ে নিতে হয়।’ বিপিএলে এসেও ভাগ্য বদলাচ্ছে না তাহিরের। চট্টগ্রামের উইকেটও যে ব্যাটিং–স্বর্গ! নিজের ভাগ্য নিয়ে মজা করে তাহির বললেন, ‘এখানেও কোনো সম্ভাবনা নেই (হাসি)। আমি এর মধ্যেই উইকেট দেখে এসেছি। এখানে আমি শুধু কমলা, আপেলই ঘোরাতে পারব, আর কিছু নয় (হাসি)।’
দীর্ঘদিন আইপিএল খেলেছেন, সেই অভিজ্ঞতার কথাও শোনালেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই স্পিনার, ‘বিশ্বের যেখানেই খেলতে যান না কেন, মানুষ আইপিএল নিয়ে বেশি কথা বলবে। এটা আসলেই অনেক বড় টুর্নামেন্ট, সবাই সেখানে যেতে চায়। তবে আমি ঢাকায় গ্যালারিভরা দেখেছি, এখন এখানে এসেছি, এখানেও ভালো দর্শক প্রত্যাশা করছি। আমি এখানে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েও খেলেছি, অনেক দর্শক ছিল।’
মাঠে নামলেই তাহির যেমন দর্শকদের ভিড় প্রত্যাশা করেন, দর্শকেরাও দেখতে চান তাহিরের সেই ভিন্নধর্মী উইকেট-উদ্যাপন। বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই তা দেখেছেন মিরপুরের দর্শকেরা। এবার সাগরিকার দর্শকদের সেই উদ্যাপন দেখার পালা।