আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নাসির উদ্দিন হাওলাদারকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় তার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসির উদ্দিন হাওলাদারকে অপরিচিত এক ব্যক্তি এ হুমকি দেয়। হুমকি দেওয়ার বিষয়টি নাসির লিখিতভাবে মঠবাড়িয়া থানায় জানিয়েছেন।
উক্ত ফোনালাপে শোনা যাচ্ছে ০১৭২০৮৮৯৭২৫ নম্বর থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নাসির আহম্মেদকে কল করা ব্যক্তিটি বলেন, ‘হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। চেয়ারম্যান সাহেব বলছিলেন। আমি আপনার এলাকা থেকেই বলছিলাম, এই তো ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের। আপনার ভালোর জন্য বলছি ভাই, আপনি নৌকার বিরুদ্ধে ইলেকশন কইরেন না। লাষ্ট বারের জন্য আপনাকে বলা হইলো এটা। দ্বিতীয়বার আর আপনাকে বলা হবে না। আপনি নৌকার বিরুদ্ধে ইলেকশন করলে আপনার হাত-পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে থোওয়া হবে, আপনার ঘরবাড়ি জ্জালাইয়া দেওয়া হবে।’ আপনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। এ সময় পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের বহিস্কৃত এক নেতার নাম উল্লেখ করে আরও বলা হয়, আপনি তো তাদের চেনেন, তারা কি জিনিষ। তারা দু’একদিনের মধ্যে এলাকায় আসবে। আপনাকে শেষবারের মতো বলছি আর কিন্তু বলা হবে না, পরিস্থিতি কিন্তু খারাপ, আপনাকে কিন্তু ফ্যালাইয়া দেওয়া হবে’।
এ বিষয়ে বড়মাছুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নাসির আহম্মেদ বলেন, রবিবার রাত ৯টা ৮মিনিটের দিকে আমার নিজের ব্যবহৃত ০১৭১২৪৯৫২১৩ এ মোবাইল নাম্বারে ০১৭২০৮৮৯৭২৫ মোবাইল নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে আমাকে নির্বাচন থেকে সড়ে যাওয়ার জন্য বলে। তা’নাহলে আমার হাত-পা ভেঙ্গে ফেলাসহ আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এমনকি একপর্যাযে আমার জীবন নাশেরও হুমকি দেয়। এছাড়া আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যও হুমকি দেওয়া হয়। তিনি জানান, উক্ত ঘটনার পরে তিনি মঠবাড়িয়া থানায় উক্ত মোবাইল নাম্বার উল্লেখ করে একটি জিডি করেছেন।
মঠবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, বড়মাছুয়ায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অজ্ঞাত মোবাইল নাম্বার থেকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। মোবাইল নাম্বারের ব্যক্তিকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মঠবাড়িয়ার উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. নাসির আহম্মেদ। স্থানীয় দলীয় কোন্দলের কারণে তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন পান নি। এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আয়শা আক্তার মনি নামে একজনকে। দলীয় এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. নাসির আহম্মেদ। আগামী ৫ জানুয়ারী এ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বড়মাছুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আয়শা আক্তার মনি পাশ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। বিবাহ সূত্রে তিনি সেখানকার বাসিন্দা। তবে তার পৈত্রিক বাড়ি বড়মাছুয়া ইউনিয়নে। গত কয়েকমাস আগে তিনি এ ইউনিয়নের ভোটার হন।
অন্যদিকে, বড়মাছুয়া ইউনিয়নে নির্বাচন পূর্ব সহিংসতার আশঙ্কায় বড়মাছুয়া বাজারে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি পুরো বাজার সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
আগামী ৫ জানুয়ারি মঠবাড়িয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ৩৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট ২৯০ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।