বরগুনার আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করায় চেয়ারম্যান পদ থেকে বুধবার দুপুরে অব্যাহতি দিয়েছেন নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা জজ হাসানুল ইসলাম।
একই সাথে নির্বাচন কমিশনারকে পুন:রায় তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফোরকান বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে অংশগ্রহণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন গোলাম সরোয়ার। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী অপর আওয়ামীলীগ নেতা শাসুদ্দিন ছজু ঋণখেলাপির দায়ে ফোরকানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণার জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শামসুদ্দিন ছজু উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে ফোরকার তার নিজ নামে এক বছর মেয়াদে ১৮ লাখ টাকা ঋণ তোলেন। যা সুদ-আসলে ২৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।এছাড়াও ফোরকানের মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সর নামেও এক বছরের মেয়াদে ঋণ তোলেন গোলাম সরোয়ার ফোরকান। যা সুদ-আসলে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে। যথা সময়ে এই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকা নাম ওঠে গোলাম সরোয়ার ফোরকানের।
২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মনোনয়ন পত্রে গোলাম সরোয়ার ফোরকান তার ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।এরপর নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি।
এ মামলায় বরগুনার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও উপজেলা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। রায়ে তিনি উল্লেখ করেন ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ফোরকানকে আমতলী উপজেলার চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে শামসুদ্দিন ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট প্রকাশে নির্দেশ প্রদান করেন।
রায়ের বিরুদ্ধে গোলাম সরোয়ার ফোরকান অত্র ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। আপীল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন শুনানী শেষে বুধবার আপীল ট্রাইব্যুনাল উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণা করে পুনঃ নির্বাচনের আদেশ দেন।
মামলার বাদী ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী শামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,আমি ন্যায় বিচার পাইনি। আমি মামলায় চেয়েছি ফোরকান সাহেব তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হয়েছে। তার পদ বাতিল করে আমাকে বিজয়ী ঘোষনা করবে। যা নিম্ম আদালত রায় দিয়েছে।
আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে আপিল করব। আমি কোন তথ্য গোপন করিনি।
শামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুর আইনজীবী জগদীশ চন্দ্র শীল যুগান্তরকে বলেন, আদালতের বিচারক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষনা করে পুনঃ নির্বাচনের আদেশ দিয়েছেন।
গোলাম ছরোয়ার ফোরকানের আইনজীবী মোঃ আনিছুর রহমান বলেন,তথ্য গোপন করায় নিম্ন আদালত গোলাম সরোয়ার চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে শামসুদ্দিন ছজুকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে ছিল। এই রায়ে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ফোরকান আপিল করলে আদালত রায় স্থগিত করেন। বুধবার জেলা ও দায়রা জজ ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হাসানুল ইসলাম শামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে চেয়ারম্যান ঘোষণার আদেশ বাতিল করে নির্বাচন কমিশনকে পুনরায় আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আদেশ দেন।
বরগুনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, এখনো আমরা আদেশ পাইনি।আদেশের কপি পেলে তা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।এর পর তাদের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।