30.3 C
Mathbaria
মঙ্গলবার, মার্চ ২১, ২০২৩

বেটা ভার্সন

পর্যাপ্ত ইলিশ না পেয়ে জেলেরা ফিরছেন হতাশ হয়ে

যা-ও ইলিশ পাচ্ছেন, তা বিক্রি করে উঠছে না খরচ।

ইলিশ কম : এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। জালভরা ইলিশ ধরার স্বপ্ন নিয়ে দিন-রাত নদীতে কাটাচ্ছেন জেলেরা। কিন্তু পর্যাপ্ত ইলিশ না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। গতকাল বরগুনার আমতলীর বুড়িশ্বর নদে। ছবি : সংগৃহীত

আরও পড়ুন

অপরাধ

মঠবাড়িয়া উপজেলা

জেলেরা নদ-নদী ও সাগর থেকে ফিরছেন ‘খালি’ হাতে। যা-ও ইলিশ পাচ্ছেন, তা বিক্রি করে উঠছে না খরচ। অথচ এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। বাজারে ইলিশের দাম চড়া।

মূলত আবহাওয়ার খামখেয়ালি স্বভাবকেই ইলিশের আকালের জন্য দায়ী করছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁরা বলছেন, তিনটি লঘুচাপ, এর ওপরে উজানের পানির কারণে জেলেরা অন্তত ২০ দিন ছিলেন ঘরে। এখন বন্যার পানি নদী থেকে সাগরে ছুটছে। উজানের পানির স্রোত এতটাই প্রকট যে, তা অতিক্রম করে ইলিশের অভয়াশ্রমে (নদী) ফেরা প্রায় অসম্ভব। বন্যার আগে জেলেরা বারকয়েক গভীর সমুদ্রে গেলেও ইলিশের ঝাঁক সেভাবে আটকায়নি জালে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত নদী তথা জলে নুনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের উজানে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের মুখে যন্ত্রচালিত নৌকার দাপট ইলিশের ঝাঁককে ছত্রভঙ্গ করছে। মোহনার মিষ্টি জলে প্রবেশের আগেই বড় বড় ট্রলার সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই নির্বিচারে ছোট ইলিশ ধরছে। এভাবে ইলিশ কমার বিষয়টি উদ্বেগের।

তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর মহীপুরের মৎস্যজীবীরা। তাঁরা বলছেন, বৃহস্পতিবার হাজার ট্রলার ফের রওনা দিয়েছে গভীর সমুদ্রে। এখন পুবালি বাতাস বইছে। দুই-চার দিনের মধ্যে উজানের পানি সাগরে গিয়ে পড়বে। তখন সাগরমুখী স্রোত কমে আসবে। ঝিরঝির করে বৃষ্টিও ঝরছে। এই পরিস্থিতি ইলিশ ধরার পক্ষে অনুকূল। সাগরমুখী জেলেরা আশা করছেন, দিন সাতেকের মধ্যে ভালো খবর আসবে। হয়তো ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলবে।

সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও আহরণ নিশ্চিত করতে বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই (৬৫ দিন) সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে উপকূলের জেলেরা ইলিশ শিকারে গিয়েছিলেন গভীর সমুদ্রে। কিন্তু বেশির ভাগ জেলেই ফিরেছেন সামান্য ইলিশ নিয়ে। আগস্টেই পর পর তিনবার সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ১৫ দিন জেলেরা ঘরেই ছিলেন। পাশাপাশি অমাবস্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উজানের পানি। ফলে জেলেরা রবিবার পর্যন্ত নদী বা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেননি।

সাগরতীরের পদ্মা গ্রামের জেলে ইউসুফ হোসেন বলেন, অতি জোয়ারে বাড়িঘরে নদীর পানি ঢুকেছে। তা ছাড়া সাগরে সিগন্যাল ছিল। তাই জেলেরা মাছ শিকারে যাননি। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই জেলেরা নদীতে মাছ শিকারের জন্য গেছেন। এর আগে লঘুচাপের সময় যাঁরা সাগরে গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ফিরেছেন। তাঁরা বলছেন, সাগরমুখী স্রোত অস্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে নদীতে জাল ফেলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এই স্রোতে ইলিশের দেখা মিলবে না। তাই ছোট ট্রলারগুলো নদীতে যাচ্ছে না। তবে বড় মাছ ধরা ট্রলার সাগরে ছুটছে।

কুয়াকাটা খান ফিশের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন খান মোবাইল ফোনে বলেন, পৌর এলাকার এই বাজারে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় মণ মাছ আসে। জেলেরা আশপাশের নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরেন। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। মৌসুম শুরুর দিকে ১৫ থেকে ২০ মণ মাছ বাজারে আসত। লঘুচাপ ও বন্যার পানির কারণে তা কমে গেছে। ছোট ট্রলারে করে জেলেরা নদীত গিয়ে শূন্য হাতে ফিরছেন। মহীপুর মৎস্যবন্দরেও ইলিশের আকাল। সেখানকার জেলেরা রবিবার সাগরে গেছেন। এখনো তাঁরা ফেরেননি। তাই বলা যাচ্ছে না সাগরের পরিস্থিতি।

বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার জেলেপল্লীগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমুদ্রে ও নদ-নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় পরিবার নিয়ে জেলেরা যেমন কষ্টে দিন পার করছেন, তেমনি ফিশিং ট্রলার মালিক ও আড়তদাররা দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন। জেলেরা মাছ না পাওয়ায় নিত্যপণ্যের দোকানদারদের বিক্রি কমে গেছে। আবার অনেক ট্রলার ইলিশ না পাওয়ায় সমুদ্রে না গিয়ে ঘাটে অলস বসে আছে। চলতি বছরে মৌসুম ছাড়া আমতলী-তালতলীর পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে কিছু ইলিশের দেখা মিললেও এখন ভরা মৌসুমে তা নেই বললেই চলে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জেলেরা এক রকম খেয়ে না-খেয়ে দিন যাপন করছেন। এখন মৌসুমেও সমুদ্রে, নদ-নদীতে ইলিশ না থাকায় আমতলীর গুলিশাখালী নাইয়াপাড়া, বৈঠাকাটা, লোচা, বালিয়াতলী, তালতলীর নলবুনিয়া, জয়ালভাঙ্গা, ফকিরহাট, চরপাড়া জেলেপল্লীতে হাহাকার অবস্থা। গুলিশাখালী নাইয়াপাড়ার জেলে মো. রফিক বিশ্বাস বলেন, জেলেরা কষ্টে আছেন।

তালতলীর ফকিরহাট মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি ও সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী বলেন, ট্রলার মালিকরা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে জেলেদের পাঠিয়ে খরচের টাকাও উঠাতে পারছেন না। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি মেঘনা হয়ে ঢুকে পড়েছে দক্ষিণের জনপদে। তা ছাড়া অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কারণে ভাদ্রে হালকা থেকে মাঝারি অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি নদীপথে সাগরে ছুটে চলছে। সাগরমুখী সেই পানির স্রোতের তীব্রতা কমলেই নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বন্যার পানি আর লঘুচাপের কারণে আগস্টে ইলিশের দেখা মেলেনি। লকডাউনের পাশাপাশি প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে ছোট ইলিশ জেলেরা ধরেননি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক মঠবাড়িয়া প্রেস-কে জানাতে ই-মেইল করুন- mathbariapress24@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

উপকূল সহ দক্ষিন বাংলার আরও সংবাদ

সর্বশেষ