৬০ বছর বয়সী ফরিদা বেগম। ৩০ বছর আগে স্বামীকে হারান। স্বামী হারানোর শোকের চেয়েও হতাশ হয়ে পড়েন সন্তানদের নিয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকার চিন্তায়।
স্বামী মৃত ওয়াজেদ আলী সম্পদ বলতে রেখে গেছেন ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ৬ নং টিকিকাটা ইউনিয়নের ২নং পূর্ব সেনের টিকিকাটা গ্রামের ফরিদা বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার সময় রেখে যান ৪ সন্তান।
চার সন্তানের মধ্যে মেয়ে মাকসুদার বয়স ছিল তখন ১২ বছর। ছেলে ফরিদের বয়স ১০ বছর। জসিমের বয়স ৩ বছর এবং আরেক মেয়ে নাসরিনের বয়স ছিল মাত্র ৩ মাস। বড় মেয়ে মাকসুদার স্বামী ছিল দিন মজুর। এ বছর স্ট্রোক করে মারা যায়। বিধবা মাকসুদা এখন একজন গার্মেন্টস কর্মী।
ফরিদের ৩ মেয়ে ২ ছেলে। টানাটানির সংসারে বিধমা মা হাজেরা বেগমের দিকেও খেয়াল রাখেন তিনি। মা ‘বিধবা ভাতা’ পেলে একটু হলেও নিদারুণ অভাবের সংসারে স্বস্তি ফিরে পেতেন তিনি।
তৃতীয় ছেলে জসিম। ৩০ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার সময় বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। এখন মঠবাড়িয়া পৌর শহরে আলামিন বস্ত্রালয়ে মাসিক বেতনে থাকেন। মাস শেষে যা পান তা দিয়ে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আরেক মেয়ে নাসরিন। টানাটানির সংসারে বেড়ে ওঠা নাসরিনকে বিবাহের পরেও মোকাবেলা করতে হয় জীবিকার তাগিদ। স্বামী পেশায় একজন জেলে। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতে না পারলে পরের দিন খাবার জোটে না। সব মিলিয়ে ফরিদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, তার জীবনযুদ্ধের কাহিনী। তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার সময় একটি বলদ গরু ছিল আমাদের। স্থানীয়রা আমাদের কষ্ট দেখে বলদ গরুটি বিক্রি করে একটি দুগ্ধবতী গাভী কিনে দেয়। প্রতিদিন ৩ কেজি দুধ দিত গাভীটি। আর এ দুধ বিক্রি করেই অবুঝ সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতাম।
তিনি আরও বলেন, বিধবা ভাতা পাওয়ার জন্য অনেক বছর ধরে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। বিধবা ভাতা চাইতে চাইতে এখন অনেকটা বয়স্ক হয়ে গেছি। কিন্তু ভাতা আর পাইনি
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন জানান, আমার ওয়ার্ডে ১০০ জন বিধবা নারী আছে। বছরে মাত্র ৩টি বিধবা ভাতা বরাদ্দ পাই। ৪ বছরে ১২ জন বিধবাকে ভাতা দিয়েছি। সবাইকে কিভাবে দেব?
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মিরাজ আহমেদ জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই তালিকা করেন। তারপরেও ফরিদা বেগম নামে বিধবা ওই নারীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপারিশ করা হবে।